- উপস্থাপনাঃ
মাননীয় মডারেটর, বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলি, (শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলি) আমার বিপক্ষের বিতার্কিক বন্ধুরাসহ যারা দেখছেন ও শুনছেন তাদের সবাইকে আমার সালাম আসসালামু ওয়ালাইকুম। আমি মুশফিকুর রহমান স্বপ্নীল আজকের বিতর্কের বিষয় ‘দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য’ বিষয়টির পক্ষে অবস্থান করছি। আমি বিশ্বাস করি যে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য।
- সংজ্ঞায়নঃ
দুর্নীতির পরিচয় : দুর্নীতি কী? প্রথমেই আমাদেরকে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করতে হবে। দুর্নীতি একটি নেতিবাচক শব্দ। সহজ ভাষায় বুঝি কু-নীতি, কু-রীতি। নীতি বহির্ভূত কর্মকা-। অর্থাৎ ‘‘দুর্নীতি হলো অসততা, অবৈধ আচরণ, বিশেষ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে আসীন ব্যক্তিবর্গের আইন বহির্ভূত আচরণ, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ইত্যাদি।’’
* সাধারণত ঘুষ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব খাটিয়ে এবং ব্যক্তি বিশেষকে সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গণপ্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা অর্জনের নাম দুর্নীতি।
রমনাথ শর্মার মতে, ‘‘অবৈধ সুযোগ-সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত অবহেলার নাম দুর্নীতি।’’ ও এক্ষেত্রে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য। কারণ মানুষ সামাজিক জীব। এবং মানব শিশু তার ব্যাতিক্রম নয়। একটি সমাজের মূলে রয়েছে পরিবার।
তাই এটা অস্বাভাবিক নয় যে দুর্নীতি প্রতিরধে পরিবারের ভূমিকা মূখ্য হওয়া উচিত। কাদা যখন নরম থাকে তখন তাকে পরিবর্তন করে সুন্দর করা যায়। তেমনি যেকোন শিশুকে পরিবার থেকেই তৈরি করা যায়। পরিবার যদি তাকে ভালো শিক্ষা দেয় তবে সে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব নিয়েই বড় হবে। তবেই সে হতে পারবে দেশের সম্পদ।
- প্রেক্ষাপট বিশ্লেশন
ট্রান্সপেরেসির এক জরিপে দেখা যায় যে, দুর্নীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সবচেয়ে এগিয়ে আছে সোমালিয়া। তাদের এমন অবস্থা কেন এমন জানেন বিপক্ষের বন্ধুরা? কারণ তাদের পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন। তাদের দেশের পরিবারগুলো সন্তানকে দুর্নিতি কি এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব ও এর অপকারীতা সম্পর্কে কোন ধারণা বা শিক্ষাই দেয়না। তাই তারা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অজ্ঞ থেকে যায়। এরপরেও কি আপনারা বলবেন দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য নয়! বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর উন্নয়নশীল অনেক দেশেই দুর্নিতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। শক্তির অপব্যবহার এবং অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে বাড়ছে মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা।
আর এ কারণেই স্বচ্ছতা, আল্লাহভীতি ও জবাবদিহিতামূলক সংস্কৃতি গড়ে ওঠছে না। সৃষ্টির আদিকাল থেকে দুর্নীতি বন্ধের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু কার্যত কোনো কৌশলই ফলপ্রসূ হয়নি। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আরো বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল অর্জিত হয়নি। তবে কিভাবে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা যাবে সেটা এখন বিশ্বব্যাপী একটি জিজ্ঞাসা। দুর্নীতি হলো ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি দায়িত্বের অপব্যবহার।দুর্নীতি কেবল সরকারি কার্যক্রমের মধ্যে সীমিত নয়; বরং সরকারি, বেসরকারি, এনজিও বিভিন্ন পেশা, শ্রেণী, পরিবার, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্বার্থেও হতে পারে।
যেমন, একজন সরকারি কর্মকর্তা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত কার্যাবলী সম্পন্ন করতে পারেন, যা দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হবে অথবা সরকারি বাজেটের টাকা দিয়ে টেন্ডার ছাড়াই কোনো কাজ নিজের বা দলীয় লোকদের মাধ্যমে করানো অথবা টেন্ডার দিলেও কাজের মান যথাযথভাবে ঠিক না রেখে কিছু টাকা খরচ করে বাকি টাকা নিজের পকেটস্থ করাও দুর্নীতি হিসেবে গণ্য হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, দুর্নীতি হলো প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ, আইনকানুন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে উদ্ভুত এমন এক পরিস্থিতি যা সঠিকভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যাহত করে। অন্য কথায় দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবৈধ স্বার্থ হাসিল করাকে দুর্নীতি বলে। দুর্নীতির উৎপত্তি ও বিস্তার : সভ্যতার প্রথম থেকেই প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রচলন কমবেশি বিদ্যমান ছিল। সম্ভবত প্রশাসনের উৎপত্তির সাথে সাথেই এর প্রচলন ও বিস্তার ঘটতে থাকে।
এটি মানুষের ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাবের একটি মন্দ দিক। আপাত দৃষ্টিতে দেখা যায়, সারা পৃথিবীকেই দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলেছে। কিন্তু নীতি বহির্ভূত সকল প্রকার কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার ও কথা-বার্তা সবই এর আওতাভূক্ত। যেহেতু আয়-উপার্জন জীবনের বিশাল অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে যৌক্তিক কারণেই বড় করে দেখা হয়। এতসব ঝামেলার মূলে রয়েছে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবার প্রধান ভুমিকা পালন না করা।
ঢাকার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের স্টেশনারি দোকানের নাম 'অনেস্টি শপ'। যেখানে খাতা কলম, পেন্সিলসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ আছে। কিন্তু কোনো বিক্রেতা নেই।
শিক্ষার্থীরা তাদের দরকারি জিনিসটি নিয়ে নেয়। দাম পরিশোধ করে নির্ধারিত বাক্সে। শিশুকাল থেকেই সৎ এবং নীতিবান মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতেই স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ। এই অনেষ্টি শপের প্রতিষ্ঠাতা মিঃ বাশার বলেন “নৈতিকতা শিক্ষার সূচনা হওয়া দরকার পরিবার থেকে। এটি হলো মূল উৎস যেখান থেকে শিশু মৌলিক জিনিসগুলো গ্রহণ করছে।” তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবার থেকেই শিশুরা ছোটখাট অন্যায় শিখে বড় হয়।’
মি. বাশার বলেন, "উঠতি ছেলে মেয়ে- তাদের সামনে তো কোনো আদর্শ নেই। কাকে অনুসরণ করবে? যে আদর্শগুলো সামনে আছে সেগুলো নিলে বরং অনৈতিক জিনিসই বেশি শিখবে। পরিবারের সব বাবা মা চান তাদের সন্তানরা সৎ, যোগ্য ও নীতিবান হোক। কিন্তু এ শিশুরা পরিবার সমাজ থেকে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে। এবং পিতামাতার ভাল অভ্যাস গুলো আয়ত্ত করে।যেমন তারা যখন দেখবে তাদের পিতামাতা নিজেদের ভাল কাজে নিয়োজিত রাখছে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর। তখন তারা নিজে থেকে পিতামাতাকে অনুসরণ করবে। বলছেন, শৈশবে পরিবার থেকে, সমাজ থেকেই সাধুতার শিক্ষা, নীতি এবং নৈতিকতার শিক্ষা মানুষ পায়। ছোটখাট অপরাধই বড় অন্যায় ও দুর্নীতির দিকে মানুষকে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের পিতামাতার উচিত যেকোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়া। শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় অতীতে কয়েকবার বাংলাদেশ প্রথম স্থানেও উঠেছে। দুর্নীতি বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যা। দেশের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন ও সার্বিকভাবে ইতিবাচক সমাজ পরিবর্তনের পথে দুর্নীতি এক কঠোর প্রতিবন্ধক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য গবেষণা অনুযায়ী কার্যকর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি হতে পারত। তার একটি উদাহরন হল রানাপ্লাযার ধ্বংস।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে যোগসাজশের দুর্নীতি রানা প্লাজাকে গ্রাস করেছিল, তার ফলেই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক কর্মী বাহিনীর প্রায় এক হাজার ২০০ তাজা প্রাণকে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করতে হয়। এতসব জানার পরেও কেন আমার বিপক্ষ বন্ধুরা বিনা কারনে বিতর্ক করছেন।
ধন্যবাদ মাননীয় মডারেটর, ধন্যবাদ সবাইকে।
5 মন্তব্যসমূহ
এক কথায় অসাধারন।
উত্তরমুছুনফাহাদা
উত্তরমুছুনpakho dal
উত্তরমুছুনwonderfull
উত্তরমুছুন🫠🫠🫠🫠🫠🫠
উত্তরমুছুন