কোন
বাক্যে কিংবা কবিতাংশে অনেক সময় বিপুল ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাব নিহিত থাকে। কবি-সাহিত্যিকের
বচনার কোন অংশ কিংবা লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচনে লুকিয়ে থাকে গভীর জীবন-সত্য।
এ ধরনের ভাববস্তু বা জীবন-সত্যকে কিছুটা বিস্তৃত করে লেখার নাম ভাবসম্প্রসারণ। ভাবসম্প্রসারণের সময় যুক্তি,
দৃষ্টান্ত ও প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়ে অন্তর্নিহিত মূলভাবটুকু বিশদ করা হয়। ভাবসম্প্রসারণ
করার সময় নিচের কয়েকটি দিক লক্ষ রাখা ভালো:
১.
উদ্ধৃত অংশ বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে তার ভেতরের ভাবটি বুঝতে চেষ্টা করবে। মূলভাবের
সংকেত উদ্ধৃতির কোন অংশে প্রচ্ছন্ন রয়েছে, তা খুঁজে বের
করতে পারলে ভাববস্তু বোঝা সহজ হয়। উদ্ধৃত অংশে
সাধারণত
মূলভাব একটিই হয়ে থাকে। তাই সেই ভাবটি বুঝে নিয়ে সেটির সম্প্রসারণ করবে।
২.
ভাবসম্প্রসারণ অনুশীলন করার সময় অভিধান দেখে অপরিচিত শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া উচিত।
৩. ভাবসম্প্রসারণের দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে ধরাবাধা নিয়ম নেই। তবে তা প্রবন্ধের মতো বড়ো
কিংবা সারমর্মের মতো ছোট হয় না। ভাবসম্প্রসারণের বাক্য সংখ্যা ১০টির কম ও ১৫-১৬টির
বেশি না হওয়াই ভালা।
৪.
মূলভাবটিই সহজ-সরল ভাষায় সম্প্রসারিত বা বিশদ করবে। একই ধরনের কথা বার বার লিখবে না।
অন্য কোন নতুন ভাব ও অবান্তর কথা যেন এসে না যায়, সেদিকে
বিশেষ খেয়াল রাখবে।
৫.
উদ্ধৃত অংশে কোন উপমা বা রূপক থাকলে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার
চেষ্টা করতে হবে।
৬.
ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় কোনোরকম শিরোনাম দেওয়ার দরকার পড়ে না। লেখকের বা কবির নামও উলেখ করতে হয় না। কিংবা ব্যাখ্যার মতো ‘কবি বলেছেন’ ধরনের বাক্যাংশ
ব্যবহার করতে হয় না।
ভাবসম্প্রসারণের
জন্য দেওয়া কথাটিতে সাধারণত প্রকাশ্য বক্তব্যের আড়ালে গভীর ভাবসত্য লুকিয়ে থাকে।
যেমন: ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘গাছের
ফল পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু এর গভীর ভাবসত্য হলো জীবনে সাফল্য অর্জন করতে
হলে চাই ধৈর্য, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম। ভাবসম্প্রসারণ করার সময় প্রথমে প্রকাশ্য বা আক্ষরিক অর্থের দিকটি বলে পরে অন্তর্নিহিত ভাবটি
বর্ণনা করতে হয়।
0 মন্তব্যসমূহ