ভাষা হল ভাব-বিনিময়ের মাধ্যম।একজন বলে (বক্তা), অপরজন শোনে (শ্রোতা) ভাব প্রকাশের তাগিদেই ভাষার উদ্ভব। প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষের ভাষা আছে। ভাষার সাহায্যে আমরা কথা। বলি। ভাষার সাহায্যে প্রকাশ করি আমাদের মনের নানা ভাব ও আবেগ; বিভিন্ন প্রকার অনুভূতি, যেমন- আনন্দ, বেদনা, ভালােলাগা, ভালােবাসা, সুখ, দুঃখ, হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্ষোভ ইত্যাদি। ভাষার আরও কাজ রয়েছে।
১.২ ভাষার কাজ কী?
ভাষা আমাদের শিক্ষার মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমে আমরা পড়ি, লিখি, বলি এবং শুনি। ভাষার সাহায্যে আমরা আমাদের স্বাধীন মত প্রকাশ করি, একে অন্যের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কও করি। ভাষাকে দেশ গঠনের হাতিয়ার হিসেবেও গ্রহণ করা হয়। দেশগঠন বলতে দেশের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বােঝায়। এই অগ্রগতি বা কল্যাণসাধন কীভাবে করা যাবে, কীভাবে দেশের মানুষের মঙ্গল করা সম্ভব সেসব কথা ভাষার মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারি। ভাষার মাধ্যমেই আমরা সকল দেশের খবরাখবর রাখতে পারি, নানা তথ্য শুনতে পারি, বলতে পারি এবং লিখে প্রকাশ করতে পারি। বিশ্বের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে যােগাযােগ রক্ষা করতে পারি এবং বিশ্বের মানুষের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববন্ধন গড়ে তুলতে পারি।
Source: Freepik
বস্তুত ভাষার মধ্য দিয়েই মানুষ সমাজ ও সভ্যতা গড়ে তুলেছে। আমরা সমাজবদ্ধ জীব। ভাব বিনিময়ের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের সামাজিকতা বজায় রাখি। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব বিনিময় তথা সামাজিকতা বজায় রাখতে হলে তার প্রধান উপায় কথা বলা, মুখ খােলা, আওয়াজ করা। সে আওয়াজ বা ধ্বনিগুলাের একমাত্র শর্ত হচ্ছে সেগুলাে অর্থবােধক হওয়া চাই। এক এক সমাজের সকল মানুষের অর্থবােধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা। অর্থ না থাকলে ধ্বনিকে যেমন ভাষা বলা। যায় না, তেমনি ধ্বনিসমূহ অপরের কাছে বােধগম্য না হলেও তাকে ভাষা বলা যাবে না।
আজকের দিনে, এই আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষ যেভাবে গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলছে, হাজার হাজার বছর আগে অর্থাৎ প্রাচীনকালে মানুষ এভাবে কথা বলতে পারে নি। তবে আদিকাল থেকেই মানুষ একে অপরের কাছে মনের ভাব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে; এগুলাে হল : (ক) ইশারা-ইঙ্গিত, (খ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, (গ) নাচ, (ঘ) চিত্র ইত্যাদি।
১.৩ প্রকাশমাধ্যম ও ভাষা।
ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলেও ভাব প্রকাশের আরও কিছু মাধ্যম রয়েছে। ভাষা আবিষ্কারের পূর্বে নানা রকম অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে, কখনাে আবার ছবি এঁকে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করেছে। এজন্য নানা ধরনের চিহ্ন এবং সংকেতও ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা মুখ বা চেহারার নানা ভঙ্গি করে হাসি, কান্না, বিস্ময়, জিজ্ঞাসা ইত্যাদি বােঝাতে পারি। মাথা নেড়ে হাঁ বা না বােঝাতে পারি।(এ জাতীয় ভাষাকে বলে অঙ্গভঙ্গির ভাষা (Gesture Language)।)
রাস্তায় দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় গাড়ি থামায় আবার চলার নির্দেশ দেয়। রাস্তার দুপাশে অনেক নির্দেশ থাকে - কোন দিকে গাড়ি চলবে, কোন দিকে গাড়ি চলবে না, রাস্তা সােজা না বাকা, পথচারী কীভাবে রাস্তা পার হবে ইত্যাদি। আবার, যারা কথা বলতে ও শুনতে পায়ে না তাদের বলি মূক বা বধির। তাদের ব্যবহারের জন্য এক ধরনের ভাষা আছে। হাতের আঙুল ব্যবহার, করে, কখনাে আঙুল মুখে ছুঁয়ে, কখনাে আবার হাত মাথায় উঠিয়ে, কখনাে বুকে হাত দিয়ে তারা। তাদের ভাব প্রকাশ করে। ভাষার মধ্যে এই যােগাযােগও পড়ে। একে বলে সংকেত ভাষা (Sight Language)। ইশারা ভাষা হিসেবেও তা পরিচিত।
১.৪ ভাষার সংজ্ঞার্থঃঃ
মুখের অর্থপূর্ণ ও বােধগম্য কথাকেই আমরা ভাষা বলি। আমরা মুখ দিয়ে কথা বলার সময় ধ্বনির সৃষ্টি হয়। শরীর ও স্নায়ুবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, ভাষা ব্যবহারের জন্য মানুষের স্নায়ুতন্ত্র , তার মস্তিষ্ক ও অন্যান্য প্রত্যঙ্গ যেভাবে তৈরি হয়েছে, অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। কথা বা ধ্বনি সৃষ্টির জন্য আমরা যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করি, সেগুলাে হলাে : মুখ, জিভ, দাঁত, মাড়ি, তালু, ঠোট, নাক ইত্যাদি। এই প্রত্যঙ্গগুলাের সাহায্যে মানুষ কথা বলতে পারে। তাই এদের বাপ্রত্যঙ্গ বলা হয়। বাক’ শব্দের অর্থ ‘কথা। বাকপ্রত্যঙ্গ অর্থ হল— কথা বলার যন্ত্র। বাক্প্রত্যঙ্গের অন্য নাম বাগযন্ত্র । এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবােধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের ও বিনিময়ের মৌখিক ও লিখিত উপায়কে বলে ভাষা। এক কথায় বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ব্যাপক জনসমাজে প্রচলিত অর্থবান ধ্বনিমালাই ভাষা) ভাষাবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে ভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন :
মুখের অর্থপূর্ণ ও বােধগম্য কথাকেই আমরা ভাষা বলি। আমরা মুখ দিয়ে কথা বলার সময় ধ্বনির সৃষ্টি হয়। শরীর ও স্নায়ুবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, ভাষা ব্যবহারের জন্য মানুষের স্নায়ুতন্ত্র , তার মস্তিষ্ক ও অন্যান্য প্রত্যঙ্গ যেভাবে তৈরি হয়েছে, অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। কথা বা ধ্বনি সৃষ্টির জন্য আমরা যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করি, সেগুলাে হলাে : মুখ, জিভ, দাঁত, মাড়ি, তালু, ঠোট, নাক ইত্যাদি। এই প্রত্যঙ্গগুলাের সাহায্যে মানুষ কথা বলতে পারে। তাই এদের বাপ্রত্যঙ্গ বলা হয়। বাক’ শব্দের অর্থ ‘কথা। বাকপ্রত্যঙ্গ অর্থ হল— কথা বলার যন্ত্র। বাক্প্রত্যঙ্গের অন্য নাম বাগযন্ত্র । এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবােধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের ও বিনিময়ের মৌখিক ও লিখিত উপায়কে বলে ভাষা। এক কথায় বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ব্যাপক জনসমাজে প্রচলিত অর্থবান ধ্বনিমালাই ভাষা) ভাষাবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে ভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন :
* ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, মানবজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম ভাষা।
ড. মুনীর চৌধুরী ও মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবােধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হবে ভাষা।'
* ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে অপরের বােধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে থাকে, সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষাবলা হয়।
প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিম্পন্ন, কোনাে বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।
1 মন্তব্যসমূহ
আপনার পোস্টটিতে খুব উপকৃত হলাম। ব্যাকারণের আরও পোস্ট লেখার জন্য অনুরোধ রইল।
উত্তরমুছুন