আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কথা বলব, ৪২তম বিসিএস এর শেষ সময়ের প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন।
আপনাদের মধ্যে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক তাদের জন্যই এই পোস্টটি লেখা হয়েছে। এবং আপনি যদি মোটামোটি মানের একটা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য গুপ্তধন হতে পারে।
আর যদি তেমন মারাত্মক প্রস্তুতি না নিয়ে থাকেন, তাতেও বেশি ভাবার কিছু নেই। তাদের জন্য রয়েছে বিশাল সমস্যার সহজ সমাধান যা পেয়ে যাবেন পোস্টের শেষে। তো চলুন আজকের মত পোস্টটি শুরু করা যাক।
একটা তথ্য দিয়েই শুরু করি। ৩৭তম বিসিএসে প্রার্থী ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন। প্রিলিমিনারিতে পাস করেছিলেন ৮ হাজার ৫২৩ জন। ৩৮তম বিসিএসে প্রার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন (বেড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯২)। পাস করেছেন ১৬ হাজার ২৮৬ জন।
তো বুঝতেই পারছেন, কি বিশাল এক প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে আপনি যদি আপনার অবস্থান ধরে রাখতে চান তাহলে কি করবেন?
সহজ উত্তর, ফাটিয়ে প্রস্তুতি নিবেন। আমার ২টা বন্ধু এইবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ১ জন চান্স পেয়েছে, আর ১ জন পায়নি। তাদের মধ্যে দুই জনই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল।
এখন হয়তো আপনারা ভাবছেন, এই গল্প আমি কেন আপনাদের শোনাচ্ছি? হ্যা... ভাবার ই কথা। কিন্তু শোনানোর ও একটা কারণ আছে। তা কি জানেন?
কারণটা হলো, আমি আপনাদের জানাতে চাই কেন ১ জন চান্স পেল আর ১ জন চান পেল না বিসিএস পরীক্ষায়। আমি তাদের কাছে থেকে প্রথমে পুরো বিষয়টা ভালোভাবে শুনেছি, তারপর আপনাদের কাছে গুছিয়ে বলছি।
আমার ১ম বন্ধু পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে। আগে তার গল্প দিয়েই শুরু করি।
আমার ১ম বন্ধু তার নাম টা বলতে বারণ করেছে। আমরা তার একটি কাল্পনিক নাম নেই বিজয়। তো বিজয় একজন ভালো ছাত্র। সে বরাবরই সকল কিছুতে ভালো করে। কিন্তু তার পড়ার প্রতি আগ্রহ তেমন নেই। সে শুধু খোজে শর্ট টেকনিক (সহজ সমাধান)।
সে তাই এবার, বিসিএস এর জন্যও সহজ সমাধান খুজছিল। কিন্তু যেহেতু এটা অনেক প্রতিযোগীতার ব্যাপার তাই সে সহজ সমাধান না করে ৭ মাস পড়ল (হাতে সময় মাত্র ৯ মাস) এবং মারাত্মক প্রিপারেশন নিল।
এখন শেষ সময় এসে পাজা পাজা গাইড বই না পড়ে সে এইসব জিনিস পড়ল -
ওর নাম তামিম। সেও এবার বিজয়ের সাথে বিসিএস দিয়েছে। কিন্তু চান্স পায়নি। তামিম ও বরাবরই বিজয়ের থেকে ভালো ছাত্র। সে ক্লাসের ফাস্ট বয়, পড়ালেখায়ও তার তুমুল আগ্রহ। সে বেশি বেশি পড়তে চায়। আমরা সবাই তাকে বইপোকা বলতাম।
কিন্তু এখানে কথা আছে, সে কখনো গাইড এবং এমনি বইয়ের বাইরে কোন প্রকার বই পড়তে আগ্রহ দেখাত না। আর রইল কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নিউজপেপার, ইন্টারনেট, অনলাইন কোর্স এসব। এসবের দিকে সে ভুলেও যেত না। তার কাছে অনলাইন মানেই প্রতারণা। এবং মডেল টেস্ট মানেই সময় নষ্ট। তাই সে এগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এমনি যেসকল বইগুলো থাকে সেগুলো পড়ে না হয় গাইড।
এর বাইরে আর কিছুই না।
এই গল্পদুটো বলার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনারা যারা তামিমের মতো মানসিকতা নিয়ে পরীক্ষা দিবেন, তাদের চান্স পাওয়ার কথা আমি কিছু বললাম না। আর যারা এক যায়গা থেকে নয়, বহু যায়গার তথ্য মিলিয়ে পড়বে তাদের চান্স পাওয়ার হার অনেক অনেক অনেক বেশি।
এইবার বলি আপনি শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে?
১. শেষ সময়ের প্রস্তুতির কিছু দিক
অবশ্যই মডেল টেস্ট দিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটা বড় অংশ ঝরে পড়ে ভুল দাগানোর কারণে। ২০০টি প্রশ্ন অনেক প্রশ্ন। অনেকেই যেটা করেন, ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাস আগে থেকে তৈরি করেন না। মনে করেন, হলে গিয়েই একবারে ভুল না দাগিয়ে সব ঠিক দাগিয়ে ফেলবেন, কিন্তু এটা একটা বড় অনুশীলনের বিষয়, আর এ জন্য আপনাকে ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাসটা এখনই গড়ে তুলতে হবে। আমি যেভাবে এগিয়েছিলাম:
• প্রায় ১০০টি উত্তরপত্র ফটোকপি করে নিয়েছিলাম।
• প্রতিটি উত্তরপত্রের ওপর তারিখ, সঠিক দাগানোর পরিমাণ (সবুজ কালি দিয়ে) আর ভুল দাগানোর পরিমাণ (লাল কালি দিয়ে) লিখে রাখতাম।
• প্রতি ৫ থেকে ৭ দিন পরপর আমি উত্তরপত্রগুলো যাচাই করে দেখতাম, সঠিক দাগানোর পরিমাণ কতটা বাড়ল আর ভুল দাগানোর পরিমাণ কতটা কমল।
এভাবে অভ্যাস তৈরি করার কারণে পরীক্ষার হলে ভুল দাগানোর পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম।
পরীক্ষার ঠিক আগে আগে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কিছু মডেল টেস্ট আসবে, সেগুলো দেখার চেষ্টা করবেন। আর এখন যেহেতু নতুন বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করার আর সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার সময়টা এখন অন্য প্রস্তুতির দিকে দিলে ভালো হবে।
২। গাইড বইগুলো বিস্তারিতভাবে এখন না পড়ে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলোতে আপনার সমস্যা হচ্ছে, নম্বর কম আসছে, সে জায়গাগুলো বারবার দেখে নিন।
৩। ‘প্রফেসর’স-এর বিশেষ সংখ্যা’ বইটি শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য খুবই ভালো একটি বই। পারলে এটা কয়েকবার শেষ করুন এবং বিশেষ বিশেষ অংশগুলো দাগিয়ে রাখুন, যেন পরীক্ষার আগের রাতে (এবং সকালে) আপনি সেগুলো দেখে যেতে পারেন।
৪। ম্যাথের কিছু প্রশ্ন সব সময়ই আসে, যেমন বীজগণিতের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন আসে, জ্যামিতির কোণের ওপর কিছু প্রশ্ন থাকে, সংখ্যাতত্ত্বের ওপরও বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে—এই বিষয়গুলোর ওপর শেষ সময়ের দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ‘Math Without Calculator’ বইটা দেখতে পারেন।
পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু প্রস্তুতি
* প্রবেশপত্রটি প্রিন্ট করে রাখুন। এ ক্ষেত্রে আমি সব সময় যেটা করতাম, ২-৩টা কপি সঙ্গে রাখতাম। এতে সুবিধা হলো, কোনো করণে এক কপি নষ্ট হলে কিংবা ছিঁড়ে গেলে অন্য কপিটা আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে বাঁচাবে। আরেকটা সুবিধা আমি পেয়েছিলাম, ম্যাথের রাফ করার জন্য পেছনের সাদা অংশটি ব্যবহার করেছিলাম (তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য অবশ্যই পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে)।
* ম্যাথে যদি খুব ভালো প্রস্তুতি থাকে, তাহলে একদম শুরুতে উত্তর দেবেন, অন্যথায় আমার মতো শেষেও উত্তর দিতে পারেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে মাথা গরম হয়ে গিয়ে পারা উত্তর ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
* নৈতিকতার প্রশ্নগুলো এমন হয় যে এর প্রতিটি অপশনকেই সঠিক উত্তর বলে মনে হয়, তাই এ ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে শুধু ১০০ শতাংশ সঠিক উত্তরটিই দাগানো উচিত এবং ১০-এ ৫ পেলেও এ ক্ষেত্রে এটা খুব ভালো নম্বর।
* কিছু প্রশ্ন বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পুনরায় দ্রুত সেই প্রশ্নটা খুঁজে পাওয়ার জন্য একটা ছোট দাগ দিয়ে রাখুন প্রশ্নে।
* পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে হলে যাবেন এবং আপনার পাশের (সামনে, পেছনে, ডান ও বামের) মানুষের সঙ্গে অবশ্যই একটা ভালো সম্পর্ক রাখবেন। বিশ্বাস করুন, প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা—এই সব ধাপ পেরিয়ে আপনার পাশের কোনো একজনকে যদি আপনি আপনার সঙ্গে একসঙ্গে দেখতে পারেন, তাহলে সেই মানুষের সঙ্গে বাকি সবার থেকে আলাদা একটা আন্তরিকতা কাজ করবে সারা জীবন।
0 মন্তব্যসমূহ